একতরফা সংসদ নির্বাচন পাড়ি দিতে আওয়ামী লীগ একঝাঁক বিতর্কিত মুখকে নৌকায় তুলেছে। সন্ত্রাসের গডফাদার, দুর্নীতি, টেন্ডারবাজ ও চাঁদাবাজ হিসেবে এঁদের পরিচিতি এখন দেশজুড়ে। এঁদের অধিকাংশই ইতিমধ্যে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সাংসদ নির্বাচিত হতে চলেছেন।
এবার অন্তত ৩২ জন আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়েছেন, যাঁরা বিতর্কিত-সমালোচিত। এঁদের অন্তত ২৩ জন এরই মধ্যে ফাঁকা মাঠ পেয়ে সাংসদ হতে চলেছেন। প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় সরকারি দলের শতাধিক প্রার্থী নির্বাচনযুদ্ধে না নেমেই বিজয়ী হতে যাচ্ছেন।
অভিযোগ রয়েছে, জামায়াত ও বিএনপি-অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে অনেক প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বীদের অর্থের বিনিময়ে বসিয়ে দিয়ে সরাসরি জয়ী হওয়ার কৌশল করেছেন। যাঁরা স্বতন্ত্র কিংবা অন্য ছোট দলের প্রার্থীদের বাগে আনতে পারেননি, তাঁরা বিরোধী দলবিহীন নির্বাচনে ফাঁকা মাঠে গোল করার অপেক্ষায় আছেন।
গত পাঁচ বছরে নিজ নির্বাচনী এলাকা এবং সারা দেশে সমালোচিত অন্তত ১২ জন মন্ত্রী-সাংসদ এবার বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হতে চলেছেন। এঁদের একজন নৌপরিবহন ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী শাজাহান খান। পরিবহন খাতে গত পাঁচ বছরে তাঁর বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ ছিল। শ্রমিক অধিকারের নামে সড়ক নিরাপত্তার পরিপন্থী কাজও করেছেন তিনি।
এক-এগারোর সময় কারাবরণ এবং অবৈধ সম্পদ অর্জনের দায়ে ১৩ বছর কারাদণ্ড হয় সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীরের। সংসদ সদস্য পদও হারাতে বসেছিলেন। কিন্তু আইনের মারপ্যাঁচে বেরিয়ে যান তিনি। তাঁর সঙ্গে এক-এগারোর সময় নানা অভিযোগে কারাদণ্ড পাওয়া ৭৫ জনও পার পেয়ে যান।
মহীউদ্দীন খান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হওয়ার কিছু দিনের মধ্যেই শীর্ষ সন্ত্রাসী বিকাশ ছাড়া পান অনেকটা গোপনে। কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েই বিকাশ দেশ ত্যাগ করেন বলে শোনা যায়। এ প্রক্রিয়ায় তাঁর ভূমিকা ছিল এবং এ জন্য সমালোচিত হন তিনি। রানা প্লাজা ধসের পর তিনি বলেছিলেন, বিরোধীদলীয় নেতা-কর্মীরা স্তম্ভ (পিলার) ধরে ধাক্কাধাক্কি করার কারণে ভবনটি ধসে পড়তে পারে। এই বেফাঁস উক্তি করে তিনি দলের ভেতরে-বাইরে সমালোচিত হন।
মধ্যরাতে ঘুষের টাকার বস্তা নিয়ে ধরা পড়েন সাবেক রেলমন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের এপিএস ও দুজন রেল কর্মকর্তা। ৭০ লাখ টাকা নিয়ে গাড়ি মন্ত্রীর বাড়িতেই যাচ্ছিল বলে তখন রেল কর্মকর্তারা জানিয়েছিলেন। দেশ তোলপাড় করা এ ঘটনায় দপ্তর হারান সুরঞ্জিত। আওয়ামী লীগ এবারও তাঁকে মনোনয়ন দেয়। তিনিও বিনা প্রতি-দ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হতে চলেছেন।
রাজিউদ্দিন আহমদ সমালোচিত হন নরসিংদী পৌরসভার সাবেক মেয়র লোকমান হোসেন হত্যাকাণ্ডের কারণে। এ ঘটনার পর ডাক ও টেলিযোগাযোগ থেকে সরিয়ে অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বপূর্ণ শ্রম মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয় তাঁকে। তিনিও প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছাড়া নির্বাচিত হতে চলেছেন।
ভূমিদস্যুতার অভিযোগ সত্ত্বেও ঢাকা-১৪ আসনে আসলামুল হকের ওপরই আস্থা রেখেছে দল। তাঁর বিরুদ্ধে গাবতলী বাস টার্মিনালে চাঁদাবাজির অভিযোগ আছে।
মৌলভীবাজার-৪ আসনের চারবারের সাংসদ আব্দুস শহীদের বিরুদ্ধে স্থানীয় আওয়ামী লীগকে পরিবারকেন্দ্রিক করে ফেলার অভিযোগ রয়েছে। তাঁর তিন ভাই পুরো এলাকা নিয়ন্ত্রণ করেন।
ঘন ঘন বিদেশ সফর এবং প্রভাবশালী পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্কের অবনতির জন্য আওয়ামী লীগের একটি অংশ সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনিকে দায়ী করে থাকে। এ কারণে নির্বাচনকালীন সরকারে তাঁর ঠাঁই হয়নি। তবে দলীয় মনোনয়ন তিনি ‘ম্যানেজ’ করেন।
নোবেলবিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহম্মদ ইউনূসকে কারাগারে প্রেরণ এবং হরতালকারীদের ঘর থেকে ধরে এনে হত্যার কথা বলে সমালোচিত হন পাট ও বস্ত্রমন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকী। তিনি অবসরের ঘোষণা দিয়েও আবার নির্বাচনের ফাঁকা মাঠে নেমেছেন।
পদ্মা সেতু প্রকল্পে কানাডার এসএনসি-লাভালিনকে কাজ দেওয়ার ক্ষেত্রে যে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে, তাতে নাম আসে নিক্সন চৌধুরীর। তিনি সরকারি দলের সাংসদ নূর-ই আলম চৌধুরীর ভাই। সাংসদ ভাইয়ের কারণেই নিক্সন পদ্মা সেতু দুর্নীতির মামলা থেকে রেহাই পান বলে অভিযোগ রয়েছে।
দখল, দুর্নীতি-অনিয়মের অনেক অভিযোগ কেরানীগঞ্জের সাংসদ নসরুল হামিদের বিরুদ্ধে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে নিয়োগ-বদলি ও কেনাকাটায় পাঁচ বছরে যত অনিয়ম হয়েছে, তার অধিকাংশতেই জড়িয়ে আছে আ ফ ম রুহুল হকের নাম।
এঁরা সবাই ভোটের আগেই বিজয়ের মালা গলায় জড়িয়েছেন।
ঢাকা-১৫ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়েছেন কামাল আহমেদ মজুমদার। তাঁর বিরুদ্ধে মনিপুর স্কুলে ভর্তি-বাণিজ্যের অভিযোগ আছে। অভিভাবকেরা এ জন্য মিছিল করেন। আহছানউল্লাহ মিশন হাসপাতালের নামে সরকারি বরাদ্দের প্লট দখলেরও অভিযোগ আছে কামাল মজুমদারের বিরুদ্ধে। মনিপুর স্কুলে ভর্তি কার্যক্রমে বাড়তি অর্থ নেওয়ার প্রতিবেদন তৈরি করতে গিয়ে কামাল মজুমদারের হাতে নারী সাংবাদিক লাঞ্ছিত হন।
টেন্ডারবাজ ও ক্ষমতার অপব্যবহার করেও প্রার্থী: উপনির্বাচনে সাংসদ নির্বাচিত হওয়ার পর নূরুন্নবী চৌধুরী শাওনের পিস্তলে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান আওয়ামী লীগের কর্মী ইব্রাহিম। ঢাকা সিটি করপোরেশন, খাদ্য ভবন, সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরসহ বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে টেন্ডারবাজি তাঁর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে। তিনি এবার ভোটের আগেই সাংসদ হতে চলেছেন।
টেন্ডারবাজিতে জড়িত ব্যক্তিদের একটি বলয় তৈরি করে তাদের আশ্রয় দেওয়ার অভিযোগ আছে জাহাঙ্গীর কবির নানকের বিরুদ্ধে। তিনিও এবার বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হতে চলেছেন।
টেন্ডারবাজির অভিযোগ ছিল যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মীর্জা আজমের বিরুদ্ধেও। বিনিয়োগ না করেই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তমা কনস্ট্রাকশনের মালিকানার অংশীদার তিনি। টঙ্গী-ভৈরব ডাবল লাইন প্রকল্পসহ রেলের সবচেয়ে বড় কয়েকটি প্রকল্পে কাজ করছে তমা। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক চার লেনসহ সড়ক ও জনপথের অনেক প্রকল্পে ঠিকাদারি করছে। রেল ও সড়ক বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, দরপত্র জমা দেওয়ার পর মির্জা আজমের পক্ষ থেকে তদবির শুরু করা হয়। তাঁর আসনে কোনো প্রার্থী না থাকায় তিনিও বিজয়ী হওয়ার পথে।
নানক ও আজম শাহবাগে বাসে আগুন দিয়ে ১১ জনকে পুড়িয়ে মারার মামলার আসামি ছিলেন। সম্প্রতি এই মামলা থেকে খালাস পেয়েছেন তাঁরা।
গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) লঙ্ঘন করে সরকারের সঙ্গে ঠিকাদারি ব্যবসা করে বিতর্কিত সাংসদ এনামুল হক এবারও রাজশাহী-৫ আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী হওয়ার পথে।
২০০৮ সালে জাসদের হাসানুল হক ইনুকে জায়গা দিতে গিয়ে কুষ্টিয়া-২ আসন থেকে ছেঁটে ফেলা হয় মাহবুব উল আলম হানিফকে। বিনিময়ে দলে এবং সরকারে পদ পেয়ে সরকারের পাঁচ বছর ব্যবসা এবং পেশিশক্তি দুটিতেই হানিফ পারদর্শিতা দেখিয়েছেন। এবার কুষ্টিয়া-৩ আসনে হানিফ মনোনয়ন পেয়েছেন। ড্রেজারসহ সরকারের বিভিন্ন ক্রয় কার্যক্রমে মধ্যস্থতার বিনিময়ে কমিশন নেওয়ার অভিযোগ আছে তাঁর বিরুদ্ধে। এই আসনে প্রার্থী থাকলেও হানিফই দলের প্রভাবশালী প্রার্থী।
খুলনা-২ আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ঠিকাদারি কাজে প্রভাব বিস্তার ও নিয়ন্ত্রণের অভিযোগ আছে। মিজানের মালিকানাধীন ইলোরা ট্রেডার্স বর্তমান সরকারের আমলে ৫২ কোটি টাকায় খুলনা বিভাগীয় স্টেডিয়াম নির্মাণের কাজ পায়। স্টেডিয়ামের ১৭ কোটি টাকার পূর্ত কাজের ঠিকাদারি পায় মিজানের প্রতিষ্ঠান। ঠিকাদারি কাজের ভাগাভাগি নিয়ে দ্বন্দ্বের একপর্যায়ে ২০০৯ সালের ১১ জুলাই যুবলীগের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি ও খুলনা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক শহিদ ইকবাল বিথার খুন হন। সম্প্রতি বিথার হত্যা মামলায় অভিযোগপত্রে মিজানকে পুলিশ অভিযুক্ত করেছে।
গডফাদাররাও সাংসদ: আওয়ামী লীগের এবারের মনোনয়নে বড় চমক শামীম ওসমান। সারাহ বেগম কবরীকে হটিয়ে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে দলের প্রার্থী শামীম ওসমান। ১৯৯৬ সালে সাংসদ হয়ে সারা দেশে সন্ত্রাসের গডফাদার হিসেবে পরিচিতি পান তিনি। ২০০১ সালের নির্বাচনে পরাজিত হয়ে তিনি আর এলাকায় যাননি। এক-এগারোর সময় ছিলেন আত্মগোপনে। সম্পদের হিসাব জমা না দেওয়ার দায়ে তাঁর কারাদণ্ড হয়। স্কুলছাত্র তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী হত্যার ঘটনায় ওসমান পরিবারের জড়িত থাকার অভিযোগ এসেছে। এ ছাড়া পরিবহন খাতে চাঁদাবাজির প্রসঙ্গ নারায়ণগঞ্জে ব্যাপকভাবে আলোচিত।
২০০৮ সালে সাংসদ হয়েই টেকনাফের গডফাদার বনে যান আবদুর রহমান বদি। নাম ওঠে মাদক চোরাচালানের অন্যতম প্রধান পৃষ্ঠপোষকের তালিকায়। গত পাঁচ বছর সরকারি কর্মকর্তা, ঠিকাদার, শিক্ষক, আইনজীবীসহ বিভিন্ন মানুষকে নিজ হাতে পিটিয়েছেন। তাঁর আসনে প্রার্থী থাকলেও শক্ত কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী নেই।
একইভাবে ক্যাডারভিত্তিক রাজনীতি, দখলবাজি, উন্নয়নকাজ থেকে কমিশন আদায় এবং নিয়োগ-বাণিজ্যসহ নানা কারণে আলোচিত চুয়াডাঙ্গার সাংসদ সোলায়মান হক জোয়ার্দার। তাঁর আসনে প্রার্থী থাকলেও বিরোধী দলবিহীন নির্বাচনে অনায়াসে জিতে সাংসদ হবেন—এমনটাই ভাবছেন তাঁর কর্মী-সমর্থকেরা।
একাধিকবার মনোনয়ন পেয়ে জিততে পারেননি। এর পরও গত পাঁচ বছর জাহাঙ্গীর আলম সরকার কুমিল্লার মুরাদনগরের অঘোষিত সাংসদ ছিলেন। জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টির জন্য নিজের লাইসেন্স করা দুটি অস্ত্র গাড়ির সামনে রাখেন। কখনো ফাঁকা গুলি ছুড়ে প্রভাব দেখান। শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী নেই বলে এবার জয়ের আশা করতেই পারেন তিনি।
দলীয় প্রধানের আত্মীয়: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবার গোপালগঞ্জ ও রংপুরের দুটি আসন থেকে মনোনয়ন নিয়েছেন। বাগেরহাট-১ আসনে ১৯৯৬ ও ২০০৮ সালে শেখ হাসিনা নির্বাচিত হয়ে উপনির্বাচনে চাচাত ভাই শেখ হেলালকে ছেড়ে দেন। ২০০১ সালে হেলাল দুটি আসনে সরাসরি নির্বাচন করে একটিতে জেতেন। এবার হেলাল সরাসরি দলের প্রার্থী। তিনি এক-এগারোর সময় আত্মগোপনে ছিলেন। অবৈধ সম্পদ অর্জনের দায়ে এক-এগারোর সময় তাঁর ১৬ বছরের কারাদণ্ড হয়েছিল। এই আসনে কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী নেই।
প্রধানমন্ত্রীর ফুফাত ভাই শেখ সেলিম, ফুফাত বোনের ছেলে নূর-ই আলম চৌধুরী, ফুফাত ভাই আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ, ফুফাত ভাইয়ের ছেলে শেখ ফজলে নূর তাপসও মনোনয়ন পেয়েছেন। শেখ হাসিনার মেয়ের শ্বশুর খন্দকার মোশাররফ হোসেন মনোনয়ন পেয়ে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার পথে। সিরাজগঞ্জ-২ আসনে এবার প্রথম মনোনয়ন পেয়েছেন মোশাররফ হোসেনের মেয়ের জামাই হাবিবে মিলাত। প্রয়াত ওয়াজেদ মিয়ার আত্মীয় মাহবুব আরা গিনি গাইবান্ধা-২ আসনের প্রার্থী।
এক-এগারোর পর আবারও সাংসদ: এক-এগারোর সময় কারাদণ্ড এবং কারাবরণ—এরপর ২০০৮ সালের নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন হারানো অনেকেই এবার ফিরে এসেছেন। প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় পুনরায় সাংসদ হচ্ছেন।
১৯৯৬ সালে বরিশাল-১ আসন থেকে নির্বাচিত হয়ে সংসদের চিফ হুইপ ছিলেন আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ। সে সময় তাঁর এবং ছেলেদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী লালনের অভিযোগ ওঠে। তাঁর ১৩ বছরের কারাদণ্ড হয়েছিল। ২০০১ সালের নির্বাচনে তিনি পরাজিত হন। এক-এগারোর সময় আত্মগোপনে চলে যান। বরিশাল সিটি করপোরেশনের গত নির্বাচনে আওয়ামী লীগ-সমর্থিত প্রার্থী শওকত হোসেন প্রকাশ্যে সংবাদ সম্মেলন করে অভিযোগ করেছিলেন, হাসানাত আবদুল্লাহর কারণেই তিনি পরাজিত হন।
মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী ১৯৯৬ সালে চাঁদপুরের একটি আসন থেকে নির্বাচিত হয়ে প্রতিমন্ত্রী হয়ে সন্ত্রাস লালন করেন। তাঁর ছেলের বিরুদ্ধেও নানা অপকর্মের অভিযোগ ছিল। ২০০১ সালের নির্বাচনে তিনি পরাজিত হন। এক-এগারোর সময় অবৈধ সম্পদ অর্জনের দায়ে তাঁর ১০ বছরের সাজা হয়েছিল। এবার তিনি চাঁদপুর-২ আসনের প্রার্থী। তিনিও বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হচ্ছেন।
সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম মাটির নিচ থেকে সন্ত্রাসী ধরে আনার কথা বলে সমালোচিত হন। এক-এগারোর পর অন্য নেতাদের সঙ্গে তিনিও কারাগারে যান। ২০০৮ সালে তাঁকে বাদ দিয়ে ছেলে তানভীর শাকিলকে প্রার্থী করা হয়। পরে দলের সাংগঠনিক সম্পাদকের পদও হারান। এবার সভা-পতিমণ্ডলীর সদস্য এবং মনোনয়ন দুটিই পেয়েছেন তিনি। জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের দায়ে তাঁর ১৬ বছরের কারাদণ্ড হয়েছিল।
এক-এগারোর সময় অবৈধ পথে সম্পদ অর্জনের দায়ে এস এম মোস্তফা রশিদীর ১৬ বছর কারাদণ্ড হয়েছিল। ২০০৮ সালে তাঁকে মনোনয়ন দেওয়া হয়নি। এবার খুলনা-৪ আসনে সাংসদ মোল্ল্যা জালাল উদ্দিনকে বাদ দিয়ে মোস্তফা রশিদীকে দলীয় প্রার্থী করা হয়।
সংস্কারবাদী আখ্যা দিয়ে ২০০৮ সালের নির্বাচনে পটুয়াখালী-৩ থেকে আ খ ম জাহাঙ্গীর হোসাইনকে বাদ দিয়ে গোলাম মাওলা রনিকে মনোনয়ন দেওয়া হয়। সাংবাদিক পিটিয়ে এবং নদী দখলের অভিযোগে সমালোচিত গোলাম মাওলা এবার দলের মনোনয়নই চাননি। জাহাঙ্গীর ফিরে পেয়েছেন তাঁর আসন।
এ ছাড়া নতুন যাঁরা আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন, তাঁদের মধ্যে আ ফ ম বাহাউদ্দীন নাছিম, পঙ্কজ দেবনাথ, সাইমুম সারওয়ার, নিজাম হাজারী ও আমানুর রহমান খানের পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তি নেই। সন্ত্রাসে মদদ দেওয়া এবং দলে পেশি শক্তি প্রদর্শনের কারণে এঁদের কারও কারও বিরুদ্ধে দলের ভেতরে-বাইরে সমালোচনা রয়েছে।