শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ছাত্র দীপঙ্কর ঘোষ অনিক ও খায়রুল কবির হত্যা মামলার রায়ে ৯জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। চাঞ্চল্যকর এ হত্যাকাণ্ডের দু’বছর পর রায় ঘোষণা হলো।
যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- গুলজার আহমদ, ছইল মিয়া, শাহীন আহমদ ওরফে শাহীন, মোহাম্মদ লাল মিয়া ওরফে লাল, ছাইমুদ্দিন ওরফে ছাইম মিয়া, জামাল মিয়া, রকিব মিয়া ওরফে আব্দুর রকিব, মো. আব্দুল্লাহ ও সেলিম মিয়া।
এদের মধ্যে রকিব মিয়া পলাতক ও বাকিরা জামিনে ছিলেন। এছাড়া সাজাপ্রাপ্ত আসামিদের প্রত্যেককে ২০ হাজার টাকা করে অর্থদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
সিলেট বিভাগীয় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক দিলীপ কুমার দেবনাথ বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২টায় এ রায় ঘোষণা করেন।
আসামিদের বিরুদ্ধে আনীত দণ্ডবিধির ৩০২/৩৪ ধারার অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে এ রায় দেওয়া হয়।
এদিকে রায় ঘোষণার পর আসামিপক্ষের আইনজীবী মো. জালাল উদ্দিন জানান, রায় নিয়ে তারা উচ্চ আদালতে যাবেন।
ঘটনার বিবরণ
২০১১ সালের ১৬ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড পলিমার সায়েন্স বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষ দ্বিতীয় সেমিস্টারের ছয় শিক্ষার্থীসহ আটজন চেঙ্গেরখালে নৌভ্রমণে যান। সেখান থেকে ফেরার পথে কান্দিগাঁও ইউনিয়নের নোয়াপুটা-নীলগাঁওয়ের কাছে আরেকটি ইঞ্জিনচালিত নৌকা নিয়ে পাঁচ-ছয়জন যুবক তাদের তাড়া করে।
এ সময় তাদের নৌকার মাঝি ইঞ্জিন বন্ধ করে দিলে বখাটেরা নৌকায় উঠে সবার মুঠোফোন ও টাকা-পয়সা ছিনিয়ে নেয়। বখাটেরা ছাত্রীদের নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে দীপঙ্কর ও খায়রুল বাধা দেয়। বখাটেরা এসময় তাদের মাথায় লাঠি দিয়ে আঘাত করে পানিতে ফেলে দিলে তাদের মৃত্যু হয়। পরদিন ওই খাল থেকে অনিক ও খায়রুলের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
মামলার দায়ের
লাশ উদ্ধারের পর ওই দিনই শাবিপ্রবির নিবন্ধক ইশফাকুল হোসেন বাদী হয়ে সিলেটের জালালাবাদ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। পরে নৌকার মাঝি গুলজারসহ ১১ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
অভিযোগ পত্র প্রদান
দীর্ঘ তদন্তের পর গত বছর ৪ মার্চ ওই নৌকার মাঝিসহ নয়জনকে আসামি করে সিলেটের মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও জালালাবাদ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) সঞ্জিব দাশ এ অভিযোগ পত্র দাখিল করেন।
অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় কারাগারে থাকা তারেক আহমদ, সুহেল মিয়া ও সইল মিয়াকে দায় থেকে অব্যাহতি দেওয়ারও সুপারিশ করা হয় অভিযোগপত্রে।
পরে মামলার বাদী এ অভিযোগপত্রের বিরুদ্ধে নারাজি আবেদন করলে ওই বছরের ৭ মে ঘটনার অধিকতর তদন্ত করে সম্পূরক অভিযোগপত্র দাখিল করতে পুলিশকে নির্দেশ দেন আদালত।
পরে জালালবাদ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আবদুল লতিফ পুনঃতদন্ত শেষে গত বছরের ১৫ জুন অতিরিক্ত মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতে সম্পূরক অভিযোগপত্র দেন।
বিচার কাজ
চলতি বছর ২৫ ফেব্রুয়ারি অতিরিক্ত বিশেষ জজ আদালতে মামলার অভিযোগ গঠন করেন। পরে ২৫ মে মামলাটি সিলেটের বিভাগীয় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে বদলি করে সেখানে বিচারকাজ শুরু হয়।
৪৩ কার্যদিবসে মামলার ৪৪ জন সাক্ষীর মধ্যে ২৮ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ এবং অন্য বিচারিক কার্যক্রম শেষে গত ২৮ নভেম্বর বিচারক দিলীপ কুমার দেবনাথ মামলার রায়ের দিন ধার্য করেন।
আসামিদের বিরুদ্ধে আনীত দণ্ডবিধির ৩০২/৩৪ ধারার অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২টায় ৯জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়ে এ রায় দেওয়া হয়।