Home / আন্তর্জাতিক / টরন্টোয় ‘জিরোডিগ্রি ডিসাস্টার’!
টরন্টোয় ‘জিরোডিগ্রি ডিসাস্টার’!

টরন্টোয় ‘জিরোডিগ্রি ডিসাস্টার’!

গ্রেমী অ্যাওয়ার্ডপ্রাপ্ত পোর্টোরিকান শিল্পী হোসে ফেলিসিয়ানোর ক্রিসমাস গান: ‘ফালিজ নাভিদাদ, প্রোসপ্রেরো আন্নেও ফেলিসিদাদ’ অর্থাৎ ‘শুভ বড়দিন, শুভ নববর্ষ’ যখন পাশ্চাত্যের সর্বত্র প্রতিধ্বনিত হচ্ছে, ঠিক এ সময়টায় শীতের দেশ কানাডায় এক নজীরবিহীন বরফবৃষ্টিতে অন্টারিও প্রদেশের নাগরিক জীবন বিদ্যুৎবিহীনভাবে বিপর্যস্ত হয়েছে।

বিষম আশ্চর্য ঘটনার মতো হিমাঙ্কের ‘শূণ্যডিগ্রী’ তাপমাত্রা স্থিত হয়ে পড়ায় এই প্রতিকূল পরিস্থিতির সৃষ্টি। বিষয়টা অনেকেরই বোধগম্য নয়। অথচ হিমাঙ্কের এক ডিগ্রি উপরে কিংবা নিচে তাপমাত্রা হলে এমনটা হয় না – জলের ভৌতিক পরিবর্তনে বরফ জলে পরিনত হতে বাধ্য। অথচ কানাডার কোথাও কোথাও তাপমাত্রা হিমাঙ্কেরও ৩৫ থেকে ৬৫ ডিগ্রি নিচে উঠানামা করলেও মানুষের জীবন তাতে এতোটা স্থবির কিংবা বিপর্যস্ত হয় না।

গত ২০ থেকে ২২ ডিসেম্বর সময়ে এই বরফবৃষ্টি বা ‘আইস রেইন’ প্রাদেশিক রাজধানী টরন্টোসহ পাশ্ববর্তী শহরতলীর প্রায় তিন লাখ মানুষকে বিদ্যুৎবিহীন শীত ও অন্ধকারে নিপতিত করেছে। তাতে ক্রিসমাস পর্যন্ত সময়ে অনেকেরই নিরানন্দপূর্ণ সময় কাটবে বলে ধারনা করা হচ্ছে। বলা হচ্ছে, ‘ওয়ান অব দ্য ওয়ার্স্ট আইস ষ্ট্রমস ইন হিস্ট্রি’। তিনদিনের আগে অর্থাৎ ক্রিসমাসের দিন পর্যন্ত বিদ্যুৎ সচল করে তোলাটা হবে দুসাধ্য ও দুরূহ কাজ।

টরন্টো হাইড্রো বা বিদ্যুৎ বিভাগের প্রেসিডেন্ট অ্যান্থনি হেইনস বলেছেন, ‘ট্রুলি ওয়ান অব দ্য ওয়ার্স্ট আইস স্ট্রমস উই হ্যাভ সিন হেয়ার ইন অন্টারিও’। তাদের প্রায় এক লাখের বেশি গ্রাহক শুধুমাত্র দক্ষিণ অন্টারিও অঞ্চলে বিদ্যুৎবিহীন হয়ে পড়েছেন। আবহাওয়া দপ্তর ‘ইনভায়রনমেন্ট কানাডা’র তথ্যানযায়ী একমাত্র বৃহৎ টরন্টো অঞ্চলে ১০ থেকে ৩০ সেন্টিমিন্টার বরফবৃষ্টি হয়েছে। এতে সাধারন নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে পুলিশ, দমকল, এম্বুলেন্স, সিটি কর্তৃপক্ষ ও প্রাদেশিক প্রিমিয়ারকে উদ্বিগ্ন হয়ে নাগরিকদের যথাসম্ভব ঘরের বাইরে না যাওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। টরন্টো শহরে বিদ্যুৎবাহী তার বরফ আচ্ছাদিত হয়ে পড়ায় ট্রামের চলাচলটাই পুরোপুরি একদিন বন্ধ করে দেয়া হয়। এখনও বিদ্যুতের অভাবে বেশ কয়েকটি স্টেশনে পাতাল রেল চলাচল বন্ধ রয়েছে। আবার আবাসিক এলাকাসহ বেশ কিছু প্রধান সড়কে বরফ আচ্ছাদিত গাছপালা পড়ে থাকায় যান চলাচল বিঘ্নিত হচ্ছে। যথাসম্ভব সিটির জরুরী সেবা কর্মীরা বিদ্যুৎ সচল ছাড়াও সড়কে প্রতিবন্ধক গাছের ভেঙ্গে পড়া ডালপালা সরাতে ব্যস্ত।

পার্শ্ববর্তী রিচমন্ডহিল শহরে বসবাসকারী বাংলাদেশের জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের সাবেক পরিচালক ফজলে রাব্বি ‘এসএমএস’ মেসেজে জানালেন, ‘উই হ্যাভ নো কারেন্ট, হাউ এবাউট ইউ?’। উত্তরে লিখলাম- ‘উই ডু হ্যাভ কারেন্ট’। এ যেন নিজের কষ্টের চেয়ে মহানুভব হৃদয়ে অপরের খোঁজ নিলেন। তেমনি টরন্টোর উত্তর-পশ্চিমে বসবাসকারী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রনেতা ফিরোজুর রহমানকে সেলফোনে রিং দিতেই জানালেন- ‘বাসার ফোন ডেড, বিদ্যুতের অভাবে মেয়েটা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাইনাল পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে পারেনি, ঘরে খাবারও রান্না হয়নি’। স্কারবরোয় বসবাসকারী ডাকসুর সাবেক ছাত্রনেতা জসিম উদ্দিনকে ফোন দিতেই জানালেন- ‘রাস্তায় গাছের ডালপালা পড়ে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হয়েছে, বাসায় বিদ্যুৎ নেই’। এভাবে অনেকেই বিদ্যুতের অভাবে তাদের নানা কষ্টের কথা জানালেন।

টরন্টোর ডনমিলস-এগলিনটন এলাকায় বিদ্যুৎবিহীন মানুষেরা একটি কমিউনিটি সেন্টার ও জিমনেসিয়ামে আশ্রয় নিয়েছেন। অন্যত্রও তাই ঘটেছে। স্বেচ্ছাসেবীরা তাদের শীতবস্ত্র ও খাবার সরবরাহ করছেন। আমাদের বাংলাদেশি কমিউনিটির তেমন তৎপরতার কথা শোনা যায়নি। পরিচিতদের কেউ কেউ ফেসবুকে গাছের বরফ আচ্ছাদিত ভেঙ্গে পড়া ডালপালার ছবি পোস্ট দিয়েছেন।
সেই বরফের ডালপালাগুলো অপরূপ চকচক করছে। অথচ অনেকের ক্রিসমাস আনন্দ আর নেই। ফ্রিজের খাবারগুলো নষ্ট হয়েছে। তবু নিত্যকার পত্রিকায় শিরোনাম বেরিয়েছে- ‘সিটি মে হ্যাভ টু এনডিয়র কোল্ড, ডার্ক ক্রিসমাস’ এবং ‘সিটি আইসড ওভার’, আর চিরচেনা ‘ফালিজ নাভিদাদ, প্রোসপ্রেরো আন্নেও ফেলিসিদাদ’ গানটি রেডিওতে বাঁজছে!

আজকের নিউজ আপনাদের জন্য নতুন রুপে ফিরে এসেছে। সঙ্গে থাকার জন্য আপনাদের ধন্যবাদ। - আজকের নিউজ