২৫ বছর আগে ১৯৮৮ সালের এই দিনেই স্কটল্যান্ডের লকারবি শহরে বিধ্বস্ত হয়েছিল একটি বিমান। বোমার আঘাতে মারা যান বিমানের ২৭০ জন যাত্রী। লন্ডন থেকে নিউইয়র্কে যাওয়ার পথে বিমানটিতে হামলা হয়। হামলার দায় স্বীকার করেছিল লিবিয়া। এ কারণে ২০০৩ সালে নিহতদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ হিসেবে মোট ২৭০ কোটি ডলার দিয়েছিল দেশটি।
তবে ক্যারল কিং অ্যাকারসলি একটি টাকাও পাননি। অবশ্য তার সন্তান হারানোর ক্ষতি হাজার কোটি ডলার পেলেও পূরণ হতো না।
১৯৬৭ সালে ক্যারল কিং অ্যাকারসলি ছিলেন ১৯ বছর বয়সি এক তরুণী। সে বয়সেই মা হয়েছিলেন। কিন্তু ছেলে জন্ম নেয়ার দিনই এক দম্পতির হাতে নিজের সন্তানকে তুলে দেন ক্যারল। ভেবেছিলেন পালক পিতামাতার কাছেই চিরকাল থাকবে তার ছেলে। দূর থেকে ভালোবেসে যাবেন, কোনো দিন দেখতে যাবেন না। কিন্তু স্বামী মারা যাওয়ায় একাকিত্বের যন্ত্রণা কুড়ে কুড়ে খাচ্ছিলো। আর কখনো মা হতে পারেননি বলে ৪৬ বছর আগে আরেক দম্পতির হাতে তুলে দেয়া সন্তানকে খুব দেখতে ইচ্ছে করছিল। শুরু করলেন খোঁজা।
ছেলের নাম কেনেথ বিসেট এটা মনে ছিল। ইন্টারনেটে খুঁজতে গিয়ে হঠাৎ চোখে পড়লো নামটি। ভালো করে দেখতে গিয়ে বুঝলেন নামটি লেখা হয়েছে লকারবিতে বিধ্বস্ত বিমানে মারা যাওয়া যাত্রীদের তালিকায়। সন্তানকে পাওয়ার দিনেই দূরে ঠেলে দেয়া, ফিরে পাওয়ার চেষ্টা করতে গিয়েই মৃত্যু সংবাদ পাওয়া – ক্যারল কিংঅ্যাকারসলি নিজেকে এখন কোনো সান্ত্বনাই দিতে পারছেন না।
সংবাদ মাধ্যমকে ক্যারল জানান, সন্তানকে দত্তক দিয়ে দিলেও ৪৬ বছরে একটা দিনও এমন ছিল না যেদিন ছেলের কথা মনে আসেনি। প্রায়ই মনে হতো এই বুঝি দরজায় কেউ কড়া নাড়বে, দরজা খুলতেই সুদর্শন এক তরুণ হেসে বলবে, আমার মনে হয় তুমিই আমার মা।
ছেলে আসেনি, কোনো দিন এক পলকের দেখা হয়নি, একটিবারের জন্য তার মুখে ‘মা’ ডাকও শোনেননি ক্যারল কিং-অ্যাকারসলি। জেনেছেন, কেনেথ ছিল কর্নেল ইউনিভার্সিটির ছাত্র। ১৯৮৮ সালে লন্ডনে লেখাপড়ার কাজেই গিয়েছিল। নিউইয়র্কে ফেরার জন্য একদিন তৈরি হলেন। বন্ধুরা জানায়, তারা কেনেথের জন্মদিনটা একসঙ্গে উদযাপন করতে চায়। তাই জন্মদিন উদযাপন করে ২১ ডিসেম্বর নিউইয়র্কেই ফিরছিলেন। কিন্তু বোমা হামলায় বিমান বিধ্বস্ত হওয়ায় ২১ বছরেই শেষ হয়ে যায় কেনেথ বিসেটের জীবন।
ক্যারল কিং অ্যাকারসলির মতো অনেক মা-ই তাদের প্রাণপ্রিয় সন্তানকে হারিয়েছিলেন ১৯৮৮ সালের সেই বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনায়। হামলার জন্য দোষী সাব্যস্ত হয়ে জেল খাটতে হয় লিবিয়ার গোয়েন্দা কর্মকর্তা আব্দেল বাসেত আল মেগরাহিকে। ২০১২ সালে ক্যানসারে ভুগে তিনি মারা যান।
সূত্র: ডিডব্লিউ