বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার গোপীবাগে বাবা-ছেলেসহ ছয়জনকে হত্যার ঘটনায় ওয়ারী থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। নিহত লুৎফর রহমানের ছোট ছেলে আবদুল্লাহ আল ফারুক বাদী হয়ে এ মামলাটি করেন।
ওয়ারী থানার উপপরিদর্শক আবু তাহের জানান, শনিবার রাত ১১টায় মামলাটি থানায় লিপিবদ্ধ করা হয়। মামলার কার্যক্রম শেষ করতে রোববার ভোর পর্যন্ত সময় লেগে যায়। মামলায় অজ্ঞাত ১০/১১ জনকে আসামী করা হয়। মামলা নম্বর ১৪।
পুলিশের ধারণা, কোনো ধর্মীয় উগ্রপন্থি সংগঠন বা গোষ্ঠী এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। খুনিরা দক্ষ এবং এটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড।
এ ঘটনায় উগ্র জঙ্গিগোষ্ঠীকে সন্দেহ করছে পরিবার। তারা বলছে, নিহত লুৎফর রহমান জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে কথা বলতেন। এর আগেও বিভিন্ন সময়ে জঙ্গিগোষ্ঠী তার ও পরিবারের ওপর হামলা চালিয়েছিল। নিজেকে ‘ইমাম মাহদী’ আবার কখনো ‘ইমাম মাহদীর সেনাপতি’ পরিচয় দিয়ে লুৎফর রহমান ইসলামীবিরোধী মতাদর্শ প্রচার করতেন।
লুত্ফরের ছোট ছেলে ব্যাংক কর্মকর্তা আবদুল্লাহ আল ফারুক সাংবাদিকদের কাছে দাবি করেন, “সাত-আট বছর আগে আমার বাবা ও বড় ভাইয়ের ওপর হামলা চালিয়েছিল দুর্বৃত্তরা। তখনই আমরা জানতে পেরেছিলাম মুফতি হান্নানের অনুসারীরা এ হামলা চালিয়েছিল। এর পরও বিভিন্ন সময়ে আমার বাবা ও আমাদের ওপরে হামলা ও হামলার চেষ্টা হয়েছিল। তারই ধারাবাহিকতায় কোনো জঙ্গিগোষ্ঠী এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে বলে সন্দেহ করছি।“
তিনি আরও দাবি করেন, ‘১৯৯৭ সাল থেকে আমার বাবা নিজেকে ইমাম মাহাদীর সেনাপতি দাবি করে আসছিলেন। তিনি প্রচলিত পীরদের মতাদর্শ ও উগ্র মৌলবাদ জঙ্গিগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে কথা বলতেন এবং লেখালেখিও করতেন।’
লুত্ফর রহমানের ভিজিটিং কার্ডে দেখা গেছে, সেখানে লেখা আছে ‘কমান্ডার ইন চিফ অব ইমাম মাহাদী অ্যান্ড স্যাভিউর অব দ্য ওয়ার্ল্ড’। হিজবুল মাহাদী নামের একটি ওয়েবসাইটের ঠিকানাও ওই ভিজিটিং কার্ডে লেখা আছে।
লুৎফর রহমানকে এর আগে ২০১১ সালের ১৪ অক্টোবরে গ্রেপ্তার করে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। পাঁচ সহযোগীসহ ১৮ গোপীবাগের ১নং লেনের বাসা থেকে পাঁচ সহযোগীসহ গ্রেপ্তার হন তিনি।
নিজেকে ইমাম মাহদী (আ.), আবার ইমাম মাহদীকে (আ.) নবী দাবি করে তার প্রধান সেনাপতি হিসেবে পরিচয় দেয়া, ইসলামের অপব্যাখ্যা দিয়ে ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের বিভ্রান্ত করা, দিনে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের পরিবর্তে দুই ওয়াক্ত নামাজ, নতুন কালেমা ‘আব্বা আল্লাহ ইমাম মাহদী হুজ্জাতুল্লা’ প্রচার ইত্যাদি অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এসব কর্মকাণ্ডের জন্য লুৎফর রহমান তার গ্রামের বাড়ি টাঙ্গাইলের ভূয়াপুর থেকে লোকজনের তাড়া খেয়ে ঢাকায় চলে আসেন। এরপর ২০০৭ সালে সূত্রাপুর এলাকায় একই কর্মকাণ্ডের জন্য তার বিরুদ্ধে মামলা হয়। তখন বেশ কিছুদিন জেল খাটেন তিনি। জেল থেকে বেরিয়ে যাত্রাবাড়ী এলাকায় আস্তানা গড়ে একই কর্মকাণ্ড চালাতে থাকেন। পরে এলাকার লোকজন তাকে গণধোলাই দিয়ে বের করে দেয়। এরপর তিনি গোপীবাগে একই কর্মকাণ্ড শুরু করেন। অভিযোগ পেয়ে ২০১১ সালের ১৪ অক্টোবর ডিবি পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে। ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানায় তার নামে ২০০৯ সালে শাহাবাগ থানায় একটি মামলাও দায়ের করা হয় তার বিরুদ্ধে।
জানা যায়, টাঙ্গাইল থেকে ঢাকায় এসে প্রথমে সূত্রাপুরের ধূপখোলা মাঠের পাশে আখড়া গড়েন লুৎফর রহমান। ২০০৭ সালের ৩০ জুলাই একটি জাতীয় দৈনিকে তাকে নিয়ে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এর পরেরদিন ৩১ জুলাই তাকে আটক করা হয়। পরে মুচলেকা দিয়ে তিনি মুক্তি পান।
প্রসঙ্গত, শনিবার সন্ধ্যায় গোপীবাগের রামকৃষ্ণ মিশন রোডে চারতলা বাড়ির দোতলায় ছয়জনকে গলাকেটে হত্যা করা হয়। নিহতরা হলেন- লুৎফর রহমান, তার ছেলে সরোয়ার ইসলাম, লুৎফরের খাদেম মনজুর আলম এবং অনুসারি মজিবুল সরকার, মোহাম্মদ শাহিন ও মোহাম্মদ রাসেল।