লালমনিরহাট জেলার পাটগ্রাম উপজেলার সরেয়ার বাজার এলাকায় আজ রোববার পৃথক সংঘর্ষে আওয়ামী লীগ নেতা এবং উপজেলা শিবিরের সভাপতিসহ চারজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন বেশ কয়েকজন। নিহত ব্যক্তিরা হলেন শিবিরের মনিরুল ইসলাম (২৫), আবদুর রহিম (২৬) ও সাজু মিয়া (২২)। এ ছাড়া আওয়ামী লীগের নেতা মিন্টু (৩০)।
তমির উদ্দিনের ছেলে মনিরুল পাটগ্রাম উপজেলা শিবিরের সভাপতি। পাটগ্রাম সরকারি কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন তিনি। করিম আলীর ছেলে আবদুর রহিমও শিবিরকর্মী বলে জানা গেছে। সাজু মিয়ার বাবার নাম মোক্তার আলী। তিনিও শিবিরকর্মী বলে দাবি করেছে পুলিশ। মিন্টু পাটগ্রাম পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের ধর্মবিষয়ক সম্পাদক।
এদিকে এ ঘটনার জেরে পাটগ্রাম উপজেলায় আজ রাত ১১টা পর্যন্ত ১৪৪ ধারা জারি করেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রফিকুল হক।বিকেলে তা মাইকিং করে জানানো হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্র জানায়, কাদের মোল্লার ফাঁসির প্রতিবাদে ডাকা হরতালে আজ সকাল সাতটার দিকে লালমনিরহাট জেলার পাটগ্রাম উপজেলার সরেয়ার বাজার এলাকায় লালমনিরহাট-বুড়িমারী আঞ্চলিক মহাসড়কে জামায়াত-শিবিরের নেতা-কর্মীরা গাড়ি ভাঙচুর করেন। এরপর ঘটনাস্থলে পুলিশ পৌঁছে। জামায়াত-শিবিরের পিকেটাররা পুলিশকে লক্ষ্য করে ককটেল ছোড়ে। আত্মরক্ষার্থে শটগানের গুলি ও কাঁদানে গ্যাসের শেল ছোড়ে পুলিশ। এ সময় দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বেধে যায়। এতে বেশ কয়েকজন আহত হন। আহতদের মধ্যে তিনজন মারা যান। এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে।
মনিরুল ও আবদুর রহিমের মৃত্যুর খবরের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন পাটগ্রাম স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিত্সা কর্মকর্তা পি কে দাস জানিয়েছেন, হাসপাতালে আনার আগেই একজন মারা গেছেন। আরেকজন মারা গেছেন চিকিত্সাধীন অবস্থায়।
আহত অবস্থায় সাজু মিয়াকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে চিকিত্সাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান বলে জানিয়েছেন হাসপাতালের উপপরিচালক গোলাম মোস্তফা।
পাটগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সোহরাব হোসেন জানিয়েছেন, সংঘর্ষে গুরুতর আহত দুজনকে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। তবে ওই দুজন মারা গেছেন কি না, তা জানাতে পারেননি তিনি।
সংঘর্ষের ঘটনার পর সকাল নয়টার দিকে পাটগ্রাম পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ড আনসার-ভিডিপির কমান্ডার আমিনুর রহমানের বাড়ির সামনের দুটি বাড়ি, একই ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগের সভাপতি কাদের এলাহি ও তাঁর পাঁচ ভাইয়ের বাড়ি এবং জাতীয় পার্টির উপজেলা আহ্বায়ক কুদ্দুস এলাহির বাড়িতে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা।
পরে পুলিশ, ফায়ার সার্ভিসের সদস্য ও আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতা-কর্মীরা ওই আগুন নেভাতে আসেন।
আগুন নেভানো শেষে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা ঘটনাস্থল থেকে চলে যান। বেলা সোয়া ১১টার দিকে জামায়াত-শিবিরের নেতা-কর্মীরা এক জোট হয়ে সরেয়ার বাজার এলাকায় অবস্থানরত আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের ওপর দেশীয় অস্ত্র ও লাঠিসোঁটা নিয়ে হামলা চালান। এসময় উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। জামায়াত-শিবিরের হামলায় ঘটনাস্থলেই আওয়ামী লীগ নেতা মিন্টু নিহত হন। আহত হন আরও দুইজন।
পাটগ্রাম উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ারুল ইসলাম জানিয়েছেন, মিন্টু পাটগ্রাম পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের ধর্মবিষয় সম্পাদক।
পাটগ্রাম স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিত্সা কর্মকর্তা পি কে দাস জানিয়েছেন, মিন্টুর লাশ হাসপাতালে রয়েছে।