চাল, গম, ভোজ্যতেল ও ডালের আমদানি তূলনামূলক হারে বাড়িয়েছে সরকার। চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে যে পরিমাণ আমদানি করা হয়েছে গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় তা গড়ে ৫৪ দশমিক ৮৮ শতাংশ বেশি। যেকোনো পরিস্থিতিতে খাদ্যশস্য ও নিত্যপণ্যের সরবরাহ স্বাভাবিক রাখার বিষয়ে সতর্কতার কারণেই সরকার মজুদের এ পদক্ষেপ নিয়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞ মহল।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, ২০১২-১৩ অর্থবছরের জুলাই-অক্টোবর সময়ে চাল, গম, ডাল ও ভোজ্যতেল আমদানি হয় ৬ হাজার ২৭৭ কোটি টাকার। চলতি অর্থবছরের একই সময়ে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯ হাজার ৭২২ কোটি টাকা। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে চাল আমদানি। আলোচ্য সময়ে পণ্যটির আমদানি বেড়েছে ৪১৮ শতাংশ, ভোজ্যতেল ৫৯, গম ৫১ ও ডাল প্রায় ২০ শতাংশ। এ সময়ে আন্তর্জাতিক বাজারে এসব পণ্যের দাম যেমন কমেছে, তেমনি ডলারের বিপরীতে টাকার মান শক্তিশালী হয়েছে।
সূত্রমতে, ২০১২-১৩ অর্থবছরের পুরো সময়ে চাল আমদানি হয় ২৩৯ কোটি টাকার। এর মধ্যে প্রথম চার মাসে আমদানি হয় ১১৪ কোটি টাকা। কিন্তু চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৯১ কোটি টাকায়। এছাড়া গত অর্থবছরের প্রথম চার মাসে ২ হাজার ৫০৩ কোটি টাকার গম আমদানি হলেও চলতি অর্থবছরের একই সময়ে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৭৮৮ কোটি টাকায়।
এছাড়া গত অর্থবছরের জুলাই-অক্টোবর সময়ে ২ হাজার ৪৭৫ কোটি টাকার গম আমদানি হলেও চলতি অর্থবছরের একই সময়ে তা বেড়ে হয়েছে ৩ হাজার ৯২৩ কোটি টাকা। একই সময়ে ডালের আমদানি ১ হাজার ১৮৫ কোটি থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৪২০ কোটি টাকায়। আমদানির ক্ষেত্রে ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানগুলোকে পর্যবেক্ষণের মাধ্যমেই এলসি (লেটার অব ক্রেডিট) খোলার অনুমতি দিচ্ছেন ব্যাংকাররা।
খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে সরকারের কাছে খাদ্যশস্যের মজুদ ৯ লাখ ৩০ হাজার টনের বেশি। এর মধ্যে চাল ও গমের মজুদ যথাক্রমে ৬ লাখ ৮৭ হাজার ৩৯৭ ও ২ লাখ ৪১ হাজার ৫৬৪ টন ছাড়িয়েছে। এছাড়া বেসরকারি পর্যায়ে এ সময়ে চাল আমদানি হয়েছে ১ লাখ ৯৮ হাজার ৫৯৫ টন। সরকারিভাবে আমদানি হয়েছে ১ হাজার ২৩৯ টন।
সরকারিভাবে চাল আমদানি না বাড়ালেও মজুদ কমে আসায় গম আমদানি বাড়ানোর দিকে নজর দিচ্ছে খাদ্য মন্ত্রণালয়। চলতি অর্থবছরে সরকারিভাবে পণ্যটি আমদানি হয়েছে ৪ লাখ ৪২ হাজার ৩৮৮ টনের বেশি। এছাড়া বন্দরে খালাসের অপেক্ষায় রয়েছে আরো ৪৬ হাজার ৮৩৬ টন গম। অন্যদিকে বেসরকারিভাবে পণ্যটির আমদানি হয়েছে ১১ লাখ ৪৯ হাজার ৭৩৮ টন। বেসরকারিভাবে আমদানির জন্য এলসি খোলা হয়েছে আরো কয়েক লাখ টনের।
উল্লেখ্য, গত অর্থবছরে দেশে চাল উৎপাদন হয় ৩ কোটি ৩৮ লাখ টন, যা চাহিদার প্রায় সমপরিমাণ। এছাড়া দেশে ৩৬-৩৮ লাখ টন চাহিদা থাকলেও গম উৎপাদিত হয় ১২ লাখ ৫৪ হাজার টন। অপরদিকে ১৮ লাখ টন চাহিদার বিপরীতে গত অর্থবছর ডাল উৎপাদন হয় প্রায় ৮ লাখ টন।